Featured post

বাংলা ও বাঙালি কোন পথে !

                                                         ‌‌আমরা বাঙালিরা এখন একটা সংকটকালের মধ্য দিয়ে চলেছি। এখানে বাঙালি বলতে...

Sunday 29 November 2020

নাচুক তাহাতে শ্যামা

ফুল্ল ফুল সৌরভে আকুল, মত্ত অলিকুল গুঞ্জরিছে আশে পাশে।
শুভ্র শশী যেন হাসিরাশি, যত স্বর্গবাসী বিতরিছে ধরাবাসে॥
মৃদুমন্দ মলয়পবন, যার পরশন, স্মৃতিপট দেয় খুলে।
নদী, নদ, সরসী-হিল্লোল, ভ্রমর চঞ্চল, কত বা কমল দোলে॥
ফেনময়ী ঝরে নির্ঝরিণী—তানতরঙ্গিণী—গুহা দেয় প্রতিধ্বনি।
স্বরময় পতত্রিনিচয়, লুকায়ে পাতায়, শুনায় সোহাগবাণী॥
চিত্রকর, তরুণ ভাস্কর, স্বর্ণতুলিকর, ছোঁয় মাত্র ধরাপটে।
বর্ণখেলা ধরাতল ছায়, রাগপরিচয় ভাবরাশি জেগে ওঠে॥

মেঘমন্দ্র কুলিশ-নিস্বন, মহারণ, ভুলোক-দ্যুলোক-ব্যাপী।
অন্ধকার উগরে আঁধার, হুহুঙ্কার শ্বসিছে প্রলয়বায়ু॥
ঝলকি ঝলকি তাহে ভায়, রক্তকায় করাল বিজলীজ্বালা।
ফেনময় গর্জি মহাকায়, ঊর্মি ধায় লঙ্ঘিতে পর্বতচূড়া॥
ঘোষে ভীম গম্ভীর ভূতল, টলমল রসাতল যায় ধরা।
পৃথ্বীচ্ছেদি উঠিছে অনল, মহাচল চূর্ণ হয়ে যায় বেগে॥

শোভাময় মন্দির-আলয়, হ্রদে নীল পয়, তাহে কুবলয়শ্রেণী।
দ্রাক্ষাফল-হৃদয়-রুধির, ফেনশুভ্রশির, বলে মৃদু মৃদু বাণী॥
শ্রুতিপথে বীণার ঝঙ্কার, বাসনা বিস্তার, রাগ তাল মান লয়ে।
কতমত ব্রজের উচ্ছ্বাস, গোপী-তপ্তশ্বাস, অশ্রুরাশি পড়ে বয়ে॥
বিম্বফল যুবতী-অধর, ভাবের সাগর—নীলোৎপল দুটি আঁখি।
দুটি কর—বাঞ্ছাঅগ্রসর, প্রেমের পিঞ্জর, তাহে বাঁধা প্রাণপাখী॥

ডাকে ভেরী, বাজে ঝর‍্‍র্ ঝর‍্‍র্ দামামা নক্কাড়, বীর দাপে কাঁপে ধরা।
ঘোষে তোপ বব-বব-বম্, বব-বব-বম্ বন্দুকের কড়কড়া॥
ধূমে ধূমে ভীম রণস্থল, গরজি অনল বমে শত জ্বালামুখী।
ফাটে গোলা লাগে বুকে গায়, কোথা উড়ে যায় আসোয়ার ঘোড়া হাতী॥
পৃথ্বীতল কাঁপে থরথর, লক্ষ অশ্ববরপৃষ্ঠে বীর ঝাঁকে রণে।
ভেদি ধূম গোলাবরিষণ গুলি স্বন্ স্বন্, শত্রুতোপ আনে ছিনে॥
আগে যায় বীর্য-পরিচয় পতাকা-নিচয়, দণ্ডে ঝরে রক্তধারা।
সঙ্গে সঙ্গে পদাতিকদল, বন্দুক প্রবল, বীরমদে মাতোয়ারা॥
ঐ পড়ে বীর ধ্বজাধারী, অন্য বীর তারি ধ্বজা লয়ে আগে চলে।
তলে তার ঢের হয়ে যায় মৃত বীরকায়, তবু পিছে নাহি টলে॥
দেহ চায় সুখের সঙ্গম, চিত্ত-বিহঙ্গম সঙ্গীত-সুধার ধার।
মন চায় হাসির হিন্দোল, প্রাণ সদা লোল যাইতে দুঃখের পার॥
ছাড়ি হিম শশাঙ্কচ্ছটায়, কেবা বল চায়, মধ্যাহ্নপতন-জ্বালা।
প্রাণ যার চণ্ড দিবাকর, স্নিগ্ধ শশধর, সেও তবু লাগে ভাল॥
সুখতরে সবাই কাতর, কেবা সে পামর দুঃখে যার ভালবাসা?
সুখে দুঃখ, অমৃতে গরল, কণ্ঠে হলাহল, তবু নাহি ছাড়ে আশা॥
রুদ্রমুখে সবাই ডরায়, কেহ নাহি চায় মৃত্যুরূপা এলোকেশী।
উষ্ণধার, রুধির-উদ্গার, ভীম তরবার খসাইয়ে দেয় বাঁশী॥
সত্য তুমি মৃত্যরূপা কালী, সুখবনমালী তোমার মায়ার ছায়া।
করালিনি, কর মর্মচ্ছেদ, হোক মায়াভেদ, সুখস্বপ্ন দেহে দয়া॥
মুণ্ডমালা পরায়ে তোমায়, ভয়ে ফিরে চায়, নাম দেয় দয়াময়ী।
প্রাণ কাঁপে, ভীম অট্টহাস, নগ্ন দিক‍্‍বাস, বলে মা দানবজয়ী॥
মুখে বলে দেখিবে তোমায়, আসিলে সময় কোথা যায় কেবা জানে।
মৃত্যু তুমি, রোগ মহামারী বিষকুম্ভ ভরি, বিতরিছ জনে জনে॥

হে উন্মাদ, আপনা ভুলাও, ফিরে নাহি চাও, পাছে দেখ ভয়ঙ্করা।
দুখ চাও, সুখ হবে বলে, ভক্তিপূজাছলে স্বার্থ-সিদ্ধি মনে ভরা॥
ছাগকণ্ঠ রুধিরের ধার, ভয়ের সঞ্চার, দেখে তোর হিয়া কাঁপে।
কাপুরুষ! দয়ার আধার! ধন্য ব্যবহার! মর্মকথা বলি কাকে?
ভাঙ্গ বীণা—প্রেমসুধাপান, মহা আকর্ষণ—দূর কর নারীমায়া।
আগুয়ান, সিন্ধুরোলে গান, অশ্রুজলপান, প্রাণপণ, যাক্ কায়া॥
জাগো বীর, ঘুচায়ে স্বপন, শিয়রে শমন, ভয় কি তোমার সাজে?
দুঃখভার, এ ভব-ঈশ্বর, মন্দির তাহার প্রেতভূমি চিতামাঝে॥
পূজা তাঁর সংগ্রাম অপার, সদা পরাজয় তাহা না ডরাক তোমা।
চূর্ণ হোক স্বার্থ সাধ মান, হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা . 

     


আমরা ইতোপূর্বে স্বামী বিবেকানন্দের আলোচ্য "নাচুক তাহাতে শ্যামা" কবিতাটির  ইংরেজি অনুবাদ "এ্যন্ড লেট শ্যামা ডান্স দেয়ার " সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আজ আমরা মূল বাংলা কবিতাটি  নিয়ে কিছু কথা পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। 
   স্বামীজির বাংলা ভাষায় লেখা কবিতা বা গদ্য রচনা খুব কম । আর যেটুকু লিখেছেন , তা তাঁর গভীর জীবনবোধ ও মানবপ্রীতির উৎস থেকেই উৎসারিত । কবিতা লিখবো বলে কবিতা লেখা, তেমন ভাবনা বা সময় স্বামীজির ছিল না। বলা যেতে পারে চর্যাপদের কবিদের মতো তিনি ছিলেন সাধক কবি। সাধনার গভীর অনুভব তাঁর কবিতায় বিচ্ছুরিত। জগৎ ও জীবনের সত্যরূপ স্বাভাবিক ভাবেই স্বামীজি র কবিতায় মূল বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছে ।
স্বামী বিবেকানন্দের প্রিয় কবি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, যিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথম আধুনিকতার সৃষ্টি করে বাঙালি পাঠককে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছিলেন। বীর ও করুন রসের মিশ্রণে বাংলা সাহিত্যের একমাত্র সাহিত্যিক মহাকাব্য তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। পাশাপাশি গীতিরসের মূর্ছনাও তাঁর কবিতায় এক অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে পাঠককে অভিভূত করে। স্বামী বিবেকানন্দ প্রায়শ- ই তাঁর প্রিয় কবি মধুসূদন দত্তের কবিতা আবৃত্তি করতেন গুরুগম্ভীর কন্ঠে। সন্ন্যাসী জীবনে তিনি তাঁর আবেগ অনুভূতিকে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কবিতা লিখে প্রকাশ করেছেন। সংখ্যায় কম হলেও সেসব কবিতা বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের সম্পদ । ইতোপূর্বে তাঁর ইংরেজি কবিতা " কালী দ্য মাদার " (      ‌‌) কবিতা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছি । আজ আমরা স্বামীজির " নাচুক তাহাতে শ্যামা " বাংলা কবিতাটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো যার ইংরেজি ভার্সনের ব্যাখ্যা আগের পোস্ট - এ করেছি । বলাবাহুল্য ইংরেজি অনুবাদটি স্বামী জি নিজেই করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে, নিবেদিতার কালী সম্পর্কে ধারনা স্বামীজির কাছ থেকেই অন্বিষ্ট হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ এ সম্পর্কে তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন বলা অযৌক্তিক হবে না। আমরা পরে নিবেদিতার কালী সম্পর্কে ধারনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তিনি কালী সম্পর্কে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, মা তাঁর রচনাবলীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

         " নাচুক তাহাতে শ্যামা "  কবিতাটি ১৯০৪ খিষ্টাব্দে  ' বিবেকোদয়ম্ ' পত্রিকায় দুই পর্বে প্রথম প্রকাশিত হয়।    পরবর্তীকালে  " দ্য কমপ্লিট ওয়ার্কস্ অফ্ স্বামী বিবেকানন্দ "  গ্ৰন্থের দ্বিতীয় খণ্ড - এ কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদটি প্রকাশিত হয়। বাাংলা  স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা গ্ৰন্থের ষষ্ঠ খন্ডে মূল বাংলা কবিতাটি প্রকাাশিত  হয় । শ্যামা বা কাালীর 
প্রতি আত্মনিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এই কবিতায় । 
কবির্মনিষী বিবেকানন্দ অসাধারণ মুন্সিয়ানায় প্রকৃতির পটভূমিকায় মানবমনের স্বরূপটিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এবং এই প্রসঙ্গে বিশ্বজননী কালীর স্বরূপটিকেও ব্যক্ত করেছেন। দুঃখ - যন্ত্রনা - মৃত্যর অন্ধকারের মধ্য দিয়েই যে জীবনসংগ্রাম সেকথাও কবি বিবেকানন্দ বলতে চেয়েছেন। আমরা সাধারণত সহজ স্বাভাবিক আনন্দঘন জীবনযাত্রা আকাঙ্ক্ষা করি । কিন্তু সন্ন্যাসী-কবি সহজ জীবনের আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে জীবনের কঠিন সমস্যাগুলির মুখোমুখি হয়ে সেগুলির সমাধানের মাধ্যমে জীবনের সুখ ও শান্তি আনার কথা বলেছেন।

   সর্বমোট পাঁচটি স্তবকে প্রলয়ঙ্করী বা ভয়ঙ্করী মায়ের স্বরূপটিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। প্রথম স্তবকে প্রকৃতির স্নিগ্ধ শ্যামল শোভন রূপের অসাধারণ বর্ণনা । --
"ফুল্ল ফুল সৌরভে আকূল মত্ত অলিকূল / গুঞ্জরিছে আশে পাশে/ শুভ্র শশী যেন হাসিরাশি , মত স্বর্গ বাসী / বিতরিছে ধরাবাসে ।।

বেশ কয়েকটি চরণে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যকে বাণীরূপ দিয়েছেন অসাধারণ উপমার পর উপমা সাজিয়ে। মলয়-পবন , নদনদী যেন হাসিরাশি , ফেনময়ী নির্ঝরণী , স্বরময় পতত্রিনিশয় শোনায় সোহাগ বাণী , চিত্রকর তরুণ ভাস্কর , স্বর্ণতুলিকর ছোঁয় মাত্র ধরাপটে - প্রভৃতি শব্দচিত্র বা বাকপ্রতিমা ব্যবহার করে প্রকৃতি মায়ের সুন্দর রূপের বর্ণনা দিয়েছেন।
দ্বিতীয় স্তবকে কবি প্রকৃতির স্নিগ্ধ রূপের ঠিক বিপরীত চিত্র এঁকেছেন। প্রকৃতির এমন ভয়াল চিত্র এঁকে তিনি জীবনের ও প্রকৃতি মায়ের ভয়ংকর দিকের ইংগিত দিয়েছেন। অন্ধকার উগরে আঁধার, হুহুঙ্কার শ্বসিছে প্রলয়বায়ু , রক্তকায় করার বিজলীজ্বালা , ফেনময় গর্জি মহাকায় , উর্মিধায় লঙ্ঘিতে পর্বতচূড়া, ঘোষে ভীম গম্ভীর ভূতল -  প্রভৃতি চিত্রকল্প ব্যবহার করে কবি প্রকৃতির ভয়ংকরী স্বরূপটিকে কাব্যরূপ দিয়েছেন। শুধু বসন্ত মলয় বায়ু নয়, প্রকৃতির রক্তকায় মহাকালী রূপটিকেও কবি দেখিয়েছেন, সাধারণত মা আমরা সচরাচর ভাবি না। প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবক দুটিতে প্রকৃতির দুই ভিন্নরূপ এঁকে কবি বস্তুত বলতে চেয়েছেন - জীবনসাধনার পথে এই প্রলয়ঙ্করী জীবনপথ ধরেই সত্য সুন্দর ও জীবনানন্দ পেতে হবে। ভয়ংকর পরিবেশে শ্যামা তাঁর প্রলয়ঙ্করী নাচটি নাচেন । উল্লেখ্য, এখানে কবি একটি দৃশ্যময় বর্ণনা ও সাংকেতিক প্রতিকের সাহায্যে আমাদের সামনে জগৎ ও জীবনের এই বিশেষ সত্যটি তুলে ধরেছেন। 

তৃতীয় স্তবকে আবার স্নিগ্ধ সুমধুর চিত্র । শোভাময় মন্দির - বাড়িঘর , নীলাভ হ্রদ , সেখানে বিচরণশীল কুবলয় শ্রেণী, শ্রুতিপথে বীণার ঝঙ্কার , বাসনা বিস্তার , রাগ - অভিমান, ব্রজের লীলা , গোপীদের তপ্তশ্বাসযুক্ত অশ্রুরাশি , নীলোৎপল দুটি আঁখি , ইত্যাদি শব্দবন্ধের মধ্য দিয়ে জীবনের রোমান্টিক দিকটি প্রকাশিত। প্রমময় জীবনের এমন চিত্র অসাধারণ মুন্সীয়ানায় ফুটিয়ে তোলার কারন এই যে , মানুষ সাধারণত এমন জীবনেরই স্বপ্ন দেখে। কিন্তু মানুষের জীবন সংগ্রাম ময়। 

 চতুর্থ স্তবকটির দৈর্ঘ্য অন্যান্য স্তবকের তুলনায় অনেকটাই বড় । ২৪ টি পংক্তি তথা ৪৮ টি চরণবিশিষ্ট। তৃতীয় স্তবকের ঠিক বিপরীত ভাব ও রসের কথা এখানে চিত্রিত। প্রকৃতি মায়ের ভয়াল রূপের বর্ণনা। যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে শ্যামা মায়ের আগমন। " ডাকে ভেরী, দামামা, বীর দাপে কাঁপে ধরা , বব- বব ব্ম্ তোপ , ভীম রণস্থল , পৃত্থিতল কাঁপে থরথর, ঝরে রক্তধারা , বীরমদে মাতোয়ারা - প্রভৃতি শব্দচিত্র দিয়ে জীবনের কঠিন রূঢ় ভয়াল রুদ্র রূপটি উপস্থাপিত করেছেন। পাশাপাশি আমাদের মনের স্বপ্ন - সুখ - আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি সহজ সরল স্বাভাবিক চাহিদাগুলোর কথাও ব্যক্ত করেছেন। অসাধারন কাব্যময়তায় সন্ত কবি বর্ণনা করেছেন : 

" দেহ চায় সুখের সঙ্গম, চিত্ত - বিহঙ্গম সঙ্গীত - /  সুধার ধার । / মন চায় হাসির হিন্দোল , প্রাণ সদা রোল রাইতে ,/ দুঃখের পার ।। " 

মানুষের স্বাভাবিক মানসিক স্বরূপটিকে কবি গভীরভাবে নির্দেশ করেছেন -  " সুখের জন্য সবাই কাতর , কেবা সে পামর দুঃখে / যার ভালবাসা ? " শত দুঃখের মধ্যেও মানুষ আশার - মরীচিকায় ঘুরে মরে। কেউ চায় না মৃত্যুরূপী এলোকেশী - কে। " রুদ্রমুখে সবাই ডরায় " - একথা কবি বলেছেন। কিন্তু সন্ন্যাসী-কবি মৃত্যু- রূপা কালী বা প্রকৃতিকেই আহ্বান জানিয়েছেন - " সত্য তুমি মৃত্যরূপা কালী , সুখ বনমালী তোমার / মায়ার ছায়া । / করালিনি , কর মর্মচ্ছেদ , হোক মায়াভেদ , / সুখস্বপ্ন দেহে দয়া ।।

 মৃত্যু , রোগ , মহামারী - রূপী এ জগৎ মায়েরই দান । তাই মা দানবজয়ীও । " মৃত্যু তুমি , রোগ মহামারী বিষকুম্ভ ভরি , বিতরিছ /জনে জনে " ।। 
শেষ স্তবক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । ভয়ংকর পরিবেশেই শ্যামা তাঁর প্রলয়ঙ্করী নাচটি নাচেন। তিনি সকল অবস্থার নিয়ন্ত্রক । শ্যামা ভালো - মন্দ , শান্ত - ভয়ংকর - এই উভয় অবস্থার -ই নিয়ন্ত্রক । সুতরাং বীর হৃদয়ের পূজা সংগ্ৰামের মধ্য দিয়েই - 
" পূজা তাঁর সংগ্ৰাম  অপার , সদা পরাজয় তাহা না / ডরাক তোমা / চূর্ণ হোক স্বার্থ সাধ মান , হৃদয় শ্মশান / নাচুক তাহাতে শ্যামা " ।।

মহৎ জীবনের সাধনা মসৃন নয়। দূর্গম পথ চলা তার সাথী । সাধারণ জীবনচর্যা  সাধকের জীবন নয় । কঠিন, দুর্গম পথ ধরেই তাকে চলা । মহৎ জীবনের সাধনা সংগ্ৰাম মুখর । সংগ্ৰাম     সংগ্ৰাম     সংগ্ৰাম ।। 

** Next post I will discuss about the philosophy which was imparted from Master Sri Ramakrishna to his most favourite disciple, Naren ( Swami Vivekananda)


No comments:

Post a Comment