আমরা, দুই দেশের বাঙালিরা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে একটি সংস্কৃতির জন্ম বহু বছর আগে থেকেই নানান সংঘর্ষ ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। রামমোহন বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দ শ্রীঅরবিন্দ নেতাজী হয়ে তার বিচিত্র বিস্তার। সাহিত্য সংস্কৃতি অর্থনীতি বিজ্ঞান রাজনৈতিক সংগ্ৰাম - প্রায় সবক্ষেত্রেই বাঙালির অবিসংবাদিত ভূমিকা ও অবদান আজ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। সেদিক থেকে এই জাতির ঐতিহাসিক ভূমিকা অনস্বীকার্য। শুধু এদেশের মানুষেরা নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ খোঁজ খবর রাখেন বাঙালিরা কেমন আছেন! বাঙালিরা জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে আছেন। তাঁরাও সজাগ থাকেন কখন কী ঘটছে এই বাংলার মাটিতে।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক কাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি এবং অকথ্য কুকথ্য বচন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর হামলা, মূখ্যমন্ত্রীর অসংযমী আক্রমণ এবং অর্ধতন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ সংঘাতের পথ ধরে নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের জয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল ও সরকার গঠন যথারীতি নিয়ম মেনে সম্পাদিত হয়ে গেল। এই ভয়াবহ কোভিড ১৯ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই এই সব রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে চলেছে এই বাংলার মাটিতে। সারা বিশ্ব জুড়েই মহামারীর কারণেই অর্থনৈতিক মন্দা। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর পরই আবার কোভিদের দ্বিতীয় ঢেউ। ভাবতে শুরু করে ছিলাম এ যাত্রা বঝি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া গেল। না, প্রবল বেগে এই মহামারীর এসে আমাদের দেশটাকে প্রায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল।
এখন যা পরিস্থিতি, ভ্যাকসিন ছাড়া সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব। এমতাবস্থায়, যথেষ্ট ভ্যাকসিন সরাবরাহ নেই। থাকবে কী করে! একশো ত্রিশ পঁয়ত্রিশ কোটি মানুষের বসবাস এখানে। এত মানুষের টিকাকরন সময় সাপেক্ষ। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আরো কিছু বায়োটিক উৎপাদন সংস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য নোতুন নোতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আরো হচ্ছে। গত একবছর অধিক সময় ধরে এই করোনার প্রকোপ চলেছে। চিকিৎসা জগতের মানুষেরা রাতদিন কাজ করে চলেছে।
এহেন অবস্থায় নির্বাচন পরবর্তী প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। কয়েক শ' মানুষ আসামের নানান জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। আরো অনেকে বিজিপি নেতাদের আশ্রয়ে পরভূমিতে বাস করতে বাধ্য হয়েছে। নেতাই বাসন্তী প্রভৃতি জায়গায় এখনও রাজনৈতিক হিংসার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাপার স্যাপার দেখে মনে হচ্ছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে না।
এরই মাঝে আরও এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গেছে। সিবিআই এর তরফে গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে প্রাক্তন ও বর্তমান চার বিশিষ্ট নেতাকে। এদের মধ্যে দুজন আবার মমতার মন্ত্রীসভার উল্লেখযোগ্য দুই বিশিষ্ট মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। মদন মিত্র টিএমসি পার্টি থেকে নির্বাচিত এম এল এ। আর শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রাক্তন মেয়র ও বর্তমানে বিজিপি ছেড়েছেন। তিনিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছের মানুষ ছিলেন। তৃণমূল ও মন্ত্রীত্ব আগেই ছেড়েছেন। এখন এঁরা এসে এস কে এম - এ চিকিৎসাধীন।
গত তিন দিন ধরে এই নাটক চলছে। আজ এই মুহূর্তে অনলাইনে হাইকোর্ট বিচার চলছে। যুযুধান দু'পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিশিষ্ট ও বিখ্যাত আইনজীবীকে আনা হয়েছে। তুষার মেহেতা সিবিআই এর পক্ষে, আর আসামি পক্ষে মনু সিংভি এবং আরো কয়েকজন আইনজীবী লড়ছে।
দুই পক্ষের মধ্যে আইনি বাদানুবাদ চলছে।
বলাবাহুল্য, এই গ্ৰেপ্তারির পিছনে তৃনমূলের পক্ষ থেকে দায়ী করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মহামান্য রাজ্যপাল শ্রী জগদীশ ধনকরকে। এবং তাঁকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে এবং এখনও সেই আক্রমণ চলছে। রাজ্যপাল বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের নানা প্রান্তে এবং আসামেও গিয়েছেন ঘরছাড়াদের সংগে দেখা করতে। তাদের যথাযোগ্য বিচারের আশ্বাস দেন। নন্দীগ্রামে তৃণমূলীরা আবার তাঁকে কালো পতাকা দেখাই। ইতিপূর্বে শীতলখুচিতেও তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে ঘেরাও করার চেষ্টা করে একদল তৃনমুল সমর্থক। এমন কেন ঘটছে, এ প্রশ্ন এখন শান্তিকামী মানুষের । সত্যিই কী এই বাংলার মাটিতে আইন শৃঙ্খলার অভাব ও অবনতি ঘটেছে?
৪৮% ভোটে সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে তৃনমুল এখন সরকারে। তার বিপরীতে ভোট দিয়েছেন ৩৯% মানুষ। এঁরা কী সুশাসন আশা করে না ? উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব সরকারেরই। কী বলেন ?